হুমায়ূন কবীর সবুজ বার্তা সম্পাদকঃ
নোট-গাইড প্রকাশ নিষিদ্ধ করে শর্তসাপেক্ষে সহায়ক বই প্রকাশের সুযোগ দিয়ে শিক্ষা আইনের খসড়া তৈরি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। অন্যদিকে প্রাইভেট-টিউশনির সুযোগ না রেখে শর্তসাপেক্ষে ফ্রিল্যান্সিং কোচিং পরিচালনার সুযোগ রাখা হচ্ছে এই আইনে। আজ মঙ্গলবার শিক্ষা আইন নিয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে খসড়া চূড়ান্ত হতে পারে।
প্রস্তাবিত খসড়া আইনে বলা হয়েছে, সরকারের অনুমোদন ছাড়া পাঠ্যপুস্তকের বিষয়বস্তু এবং এর আলোকে বিভিন্ন প্রশ্নাবলীর উত্তর দৈনিক পত্রিকায় বা ইলেকট্রনিক মাধ্যমেও প্রকাশ করা যাবে না।
খসড়ায় নোট-গাইড বই অর্থে বোঝানো হয়েছে—‘সরকার কর্তৃক অনুমোদিত সহায়ক পুস্তক ব্যতীত যে পাঠ্যপুস্তকসমূহে পাঠ্যপুস্তকের বিষয়বস্তু ও এর আলোকে বিভিন্ন পরীক্ষার সম্ভাব্য প্রশ্নাবলীর উত্তর লিপিবদ্ধ থাকে, যাহা বাণিজ্যিকভাবে বিক্রয় হয়।’
আইন অনুযায়ী, কোনো ধরনের নোট বই বা গাইড মুদ্রণ ও বাজারজাত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে সহায়ক পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ প্রকাশ ও বাজারজাত করা যাবে। তবে এই বই ক্রয়ে বাধ্য করা যাবে না। উত্সাহ প্রদানও করা যাবে না। এ অভিযোগে কেউ অভিযুক্ত হলে সরকার তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (নিরীক্ষা ও আইন) খালেদা আক্তার সাংবাদিকদের বলেন, শিক্ষা আইনের খসড়ায় মন্ত্রণালয়ের সব কাজ শেষ হয়েছে। মঙ্গলবার এই খসড়া চূড়ান্ত করতে বৈঠক ডাকা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত শেষে তা দ্রুতই মন্ত্রিসভায় পাঠানো হবে।
তথ্য অনুযায়ী, ২০১০ সালে শিক্ষানীতি প্রণয়ণের পর ২০১১ সাল থেকেই শিক্ষা আইন নিয়ে কাজ শুরু করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর আগে একাধিকবার মতামত নেওয়ার পর খসড়া তৈরি হয় এবং একবার মন্ত্রিসভায়ও উপস্থাপন করা হয়েছিল। কিন্তু নানা অসঙ্গিতে তা ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
প্রাইভেট টিউশনি ও কোচিংয়ের বিষয়ে এই খসড়ায় বলা হয়েছে, কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষক নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট টিউশনের মাধ্যমে পাঠদান করতে পারবেন না। তবে শর্ত থাকে যে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য অতিরিক্ত ক্লাসের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।
কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষক নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষার্থীকে অর্থের বিনিময়ে ইলেকট্রনিকস বা অনলাইন পদ্ধতিতেও টিউশন বা কোচিং-এর মাধ্যমে পাঠদান করতে পারবেন না এবং করলে তা অসদাচরণ গণ্যে শাস্তিযোগ্য হবে।
বলা হয়েছে, কোচিংয়ের শিক্ষক বা শিক্ষার্থীর নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চলাকালীন সময় কোচিং কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না এবং তা করলে উক্ত শিক্ষক বা শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে এবং উক্ত কোচিংয়ের নিবন্ধন বা অনুমোদন বাতিলযোগ্য হবে।
আরো শর্ত থাকে কোচিং সেন্টারের কোনো শিক্ষক তার নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষার্থীকে কোচিং করাতে পারবেন না এবং তা করলে অসদাচরণ গণ্যে শাস্তিযোগ্য হবে।
খসড়া আইনে প্রাইভেট-টিউশন অর্থ—‘কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্তৃক অর্থের বিনিময়ে নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষার্থীকে যে কোনো স্থানে পাঠদান করা’।
কোনো কোচিং সেন্টার শিক্ষামন্ত্রণালয়ের অনুমোদনসাপেক্ষ নির্ধারিত আইন দ্বারা নিবন্ধন ব্যতিরেকে পরিচালনা করা যাবে না। একই কোচিং সেন্টারে দেশি শিক্ষাক্রম ও বিদেশি শিক্ষাক্রমের পাঠদান পরিচালনা করা যাবে না। এই ধারা লঙ্ঘন করলে অনূর্ধ্ব তিন বছর কারাদণ্ড বা অনূর্ধ্ব ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয়দণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন।
সম্প্রতি ভিকারুন নিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে অধ্যক্ষ নিয়োগ করা হয়। এ নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এমন সুযোগ আছে কি না এ নিয়ে প্রশ্নও ওঠে। তবে এবার শিক্ষার খসড়া আইনে এই বিষয়টি যুক্ত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, সরকার এমপিও এবং নন-এমপিও প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক এবং অধ্যক্ষ তিন বছরের জন্য নিয়োগ দিতে পারবেন। একই প্রতিষ্ঠান বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে নিয়োগ দেওয়ার ক্ষমতা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হাতে থাকবে।
শিক্ষার্থীদের টিউশন ফির বিষয়ে বলা হয়েছে, প্রাথমিক থেকে উচ্চ শিক্ষার স্তর পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি অন্যান্য ফি সরকার কর্তৃক অনুমোদিত হতে হবে। অনুমোদন ব্যতীত কোনো ফি নেওয়া যাবে না।
শিক্ষার্থীদের শারীরিক শাস্তির বিষয়ে বলা আছে, শারীরিক শাস্তি দেওয়া যাবে না। তবে শিক্ষার্থীর মঙ্গলের জন্য শিক্ষক কর্তৃক শিক্ষার্থীকে যৌক্তিকভাবে শাসন করা যাবে। এই ধরনের শাসনের জন্য উদ্ভূত পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে শিক্ষক দায়ী হবেন না।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।